সাতক্ষীরায় নবম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা ছাত্রকে ভারতে পাচারের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে, আরো ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার (১৬ জুলাই) বিকালে সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মাফরোজা পারভিন এক জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় প্রদান করেন। এ সময় আসামি অদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন না।
সাজাপ্রাপ্ত আসামির নাম আলমগীর হোসেন ওরফে আক্তার। তিনি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ধুমঘাট ভরারচক গ্রামের মো. আব্দুর রশীদ মোল্লার ছেলে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১২ সালের ৮ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শ্যামনগর উপজেলার ধুমঘাট তরারচক গ্রামের শহীদ গাজীর ছেলে শ্রীফলকাটি ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণীর ছাত্র আল মামুন (১৪) বাড়ি থেকে মাদ্রাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। দুপুর দুটোর দিকে মাদ্রাসা ছুটির পর সে বাড়িতে না আসায় তার বাবা শহীদ গাজী ও স্বজনরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করতে থাকেন।
একপর্যায়ে আল মামুনের সাইকেলে বসে আসামি আলমগীরকে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করতে দেখো গেছে মর্মে শহীদ গাজী জানতে পারেন। ওই দিন বিকাল ৪টার দিকে শহীদ গাজীসহ কয়েকজন আসামি আলমগীরের বাড়িতে গেলে সে আল মামুন সম্পর্কে কিছু জানে না বলে জানায়। প্রতিবেশী আব্দুস সাত্তারের ছেলে বাবলু গাজীর মাধ্যমে জানতে পারেন যে, আল মামুনকে সাতক্ষীরা সদরের বৈকারী সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করে দুই লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।
বিষয়টি শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করায় তিনি বাবলু গাজীর কাছে পাচারের বিষয়টি নিশ্চিত হন। একপর্যায়ে বাবলু গাজীর সহায়তায় আল মামুনকে পরদিন ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। সীমান্ত থেকে বাড়ি আনার পথে আসামি আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন আল মামুনকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।
এ ঘটনায় ১৪ অক্টোবর আল মামুনের বাবা শহীদ গাজী বাদি হয়ে আসামি আলমগীর হোসেন ওরফে আক্তারের নাম উল্লেখ করে মানব পাচার আইনের ৭ ও ৮ ধারায় শ্যামনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আসামি আলমগীর হোসেন ওরফে আক্তারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে আসামি জামিনে মুক্তি পায়। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপ-পরিদর্শক মো. হযরত আলী ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর এজাহারভুক্ত আসামি আলমগীর হোসেন আক্তারের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলাটি বিচারের জন্য উক্ত আদালতে প্রেরিত হলে বিচারক মাফরোজা পারভিন মামলা নথি ও প্রয়োজনীয় সাক্ষীর সাক্ষ্য পর্যালোচনা শেষে আসামি আলমগীর হোসেন আক্তারের বিরুদ্ধে পাচারের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে, আরো ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ প্রদান করেন।
আসামি পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সাতক্ষীরা জজ কোর্টেও আইনজীবী অ্যাড, মিজানুর রহমান বানি এবং রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাড আলমগীর আশরাফ। বিশেষ পিপি অ্যাড আলমগীর আশরাফ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
খুলনা গেজেট/এএজে